সেন সাম্রাজ্য - প্রাচীন যুগের সমাপ্তি (The Sen Empire - The End of the Ancient Age)

সেন সাম্রাজ্য - প্রাচীন যুগের সমাপ্তি


ইতিহাসের পথ পরিক্রমায় বহুল আলোচিত, প্রাচীন যুগের সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ শাসনকাল হচ্ছে সেন রাজাদের 

শাসন কাল। বাংলাদেশের শাসন এর বিষয়ে তাৎপর্য হলো, সেন গণ সর্বপ্রথম বাংলার শাসন ক্ষমতা দখল করে 

সমগ্র বাংলার উপর তারা শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।


 
ক্ষমতা গ্রহণ

পাল বংশের পর বাংলায় সেন বংশের রাজত্ব শুরু হয় সেনদের আদি নিবাস ছিল দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে

। সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা সামন্ত শ্রেণীর পিতা বিশ্বের মূলত কর্ণাটক থেকে গোটা রাজ্যে এসেছিলেন ভাগ্যোন্নয়নে

। বাংলায় তখন পাল রাজাদের অধীনে। রামপাল, কুমার পাল, প্রমুখ রাজাগণ এর শাসনকাল থেকে পাল  

সাম্রাজ্যে বিভিন্ন দুর্বলতা দেখা দেয়। ফলে শাসনকার্যের সুবিধার্থে পাল রাজারা বিদেশি কর্মচারীদের বিভিন্ন 

প্রশাসনিক কাজে নিয়োগ করতেন। রাজা এভাবে সেন বংশের লোকেরা প্রথমে পাল রাজাদের অধীনে উচ্চপদে 

কাজ করতেন। রাজা চতুর্থ গোপালের সময়ই হেমন্ত সেন স্বয়ং রাজ সিংহাসনে বসে রাজ্য পরিচালনা শুরু 

করেন। এভাবেই একদিন রাজা চতুর্থ গোপালকে অব্যাহতি না করেই তিনি নিজেকে গৌড়ের রাজা হিসেবে 

ঘোষণা করেন। ১০৯৭ খ্রিস্টাব্দে হেমন্ত সেন এর পুত্র বিজয় সেন পালদের বিতাড়িত করে তাদের আধিপত্য 

প্রতিষ্ঠা করে।


সেন যুগের শাসন ব্যবস্থা

যদিও সেন বংশের রাজত্বকাল দীর্ঘদিন স্থায়িত্ব লাভ করতে পারেনি কিন্তু পাল বংশের অবসানের পর বাংলায় 

পুনরায় রাজনৈতিক,ঐক্য এ বংশের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়। সেন রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় হিন্দু ধর্ম বাংলায় 

প্রতিষ্ঠিত হয়। সমাজে ব্রাহ্মণদের প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। সংস্কৃতি ভাষা ও সাহিত্যের চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়। 

তবে সেন যুগে প্রজা নিপীড়ন ব্যাপক ও প্রবল আকার ধারণ করে। হিন্দু ধর্মের পুনরুত্থানের ফলে এ সময় 

বৌদ্ধদের উপর চরম আঘাত আসে। রাজকর্মচারীরা প্রজাদের কাছ থেকে উপঢৌকন আদায় করত। রাজারা  

প্রজাদের দুঃখ লাভের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সাধারণ শ্রমিক ভূমিহীন শ্রমিকেরা দুঃখে কষ্টে জীবন কাটাত

।সেন যুগের জাত পাতের বিভেদ প্রবল হয়ে উঠে। সংহতি ও ঐক্য ধ্বংস হয়।বিভিন্ন জাতির উদ্ভব করে কাউকে

 উচ্চ বা কাউকে নিচু বলে ঘোষণা করা হতো। এভাবে সেনাশাসিত বাংলাদেশ একপ্রকার স্বৈরাচার কায়েম হয়। 


সেন যুগের পতনের কারণ

শ্রেণি সংঘাত ছিল সেন রাজবংশের পতন এর অন্যতম কারণ। বিভিন্ন জাতির উদ্ভব করে যে জাতির বৈষম্য সৃষ্টি 

করেছিল তার ফলে উচ্চ শ্রেণীর লোকেরা শুধু সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতো। যার ফলে, সাধারণ শ্রমজীবী 

মানুষের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দেয় এই নিয়ে। বিজয় সেন ও লক্ষণ সেনের পর সেন বংশের তেমন কোন 

শাসক ছিল না। যার ফলে দেখা দেয় প্রশাসনিক দুর্বলতা ও অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ। বাংলায় পাল রাজাদের পর ধর্মের 

প্রতি সহিষ্ণুতা ছিল কিন্তু সেনদের সেটা ছিল না।বৌদ্ধদের উপর এমন ভাবে দমন, নিপীড়ন করা হয় যে তারা 

আশেপাশের বিভিন্ন দেশে গিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post